গাভীর ওলান ফোলা রোগের কারণ ও চিকিৎসা

 ওলান ফোলার রোগ মূলত ২৫৭ টি জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে। প্রধানত ব্যাকটেরিয়া মাইক্রোপ্লাজমা ছত্রাক সবল ইত্যাদি জীবাণু দ্বারাই রোগ সৃষ্টি হয়। পশুর ওলানের টিস্যুর প্রদাহকে ওলান ফোলা রোগ বলে। 

লাভজনক দেরী খামার ও গাভী পালনের প্রধান অন্তরায় হল ওলান ফোলা রোগ। অধিক দুধ উৎপাদন সিল্ক গাভী এর রোগে আক্রান্ত হয়।  সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে চিরতরে ওলান বা পাট নষ্ট হয়ে যাওয়া এমনকি পশুটি  মারা যেতে পারে।

পোস্ট সূচিপত্র: গাভীর ওলান ফোলা রোগের কারণ ও চিকিৎসা  

ওলান ফোলা রোগের কারণ

উলান ফোলা রোগের ওষুধটির দুধের পরিমাণ কমে যায় দুধ পাতলা দেখায় দুধের রং পরিবর্তন হয় জমাট বাধা কমে ও রক্ত মিষ্টি তো দুধ দেখা যায়। সঠিকভাবে চিকিৎসা না করলে চিরতরে ওলান বাট নষ্ট হয়ে যাওয়া এমনকি পশুটি মারা যেতে পারে।

 বাট নষ্ট বা পা না হলে খামারীকে পশুটি বিক্রয় করতে গেলে মাংসের দামে বিক্রি করতে হয়। আমাদের দেশে অধিকাংশ লোকের ধারণা এ রোগটি মানুষের মুখ লাগা চোখ লাগা বাতাস লাগা থেকে হয়। 

আরো পড়ুন : গরু মোটাতাজা করনীয়

ফলে প্রথমে পশুটির ভাই কি কারণে মালিক কবিরাজ বা ফকিরের পানি পরা ঝারা ফোক ওলানে হলুদ বাটা ইত্যাদির আশ্রয় নেই। এছাড়াও তাদের একটি ধারণা পশুটিকে চিকিৎসা করালে এবং ইনজেকশন দিলে আক্রান্ত পশুটি দুধ কমে যাবে। 

এ ধারণা পোষন করে পশ মালিকগণ ডাক্তারের সম্পূর্ণ হয় না। কুসংস্কারের ফলে পশুটি ওলানে প্রচুর ক্ষতি সাধন হয় এবং পরবর্তীতে ব্যয়বহুল চিকিৎসা দিয়েও ততটা সুফল পাওয়া যায় না। তবে ওলান ফোলা প্রথম শুরুর সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা করলে পশুটি দুধ উৎপাদনের কোন ব্যাঘাত না ঘটিয়ে দ্রুত সুস্থ করা সম্ভব।

গাভীর ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ 

অতি তীব্র অতীব রোগের ক্ষেত্রে লক্ষণ পাই একই ধরনের হয়ে থাকে। নিম্ন অতীতের রোগের লক্ষণ সমূহ হলো 

  • ওলান ফুলে যাবে। 
  • ওলানে ব্যথা অনুভব হয় এবং ওলানে হাত দিতে দেয় না
  • জ্বর থাকবে যেমন অতি তীব্র ক্ষেত্রে তাপমাত্রায় ১০৪ ডিগ্রি হতে ১০৫ ডিগ্রী ফারেনহাইট এবং তীব্র খেতে তাপমাত্রা ১০২° হতে ১০৩° ফারেনহাইট থাকবে।
  • ওলান গরম হবে।
  • গাভীর নিজের বাছোর ওলানে দুধ খেতে দিতে বাধা দেয়।
  • দুধের সাথে ছানার মত জমাট বাধা দুধ দেখা যায়। 
  • বার্ড দিয়ে দুধের পরিবর্তে পানি ঘোলাটে দুধ পুজ বের হয়। 
  • আরো পড়ুন: নেপিয়ার ঘাস চাষ পদ্ধতি
  • যে বাট আক্রান্ত হয় সে বাদ দিয়ে শুধু পানি বের হয় অথবা রক্ত আসতে পারে। 
  • ওলানের অংশ বিশেষ বা বাট একদিকে বাঁকা হয়ে যায়। 
  • পশুটির অরুচি হয় ।
  • ওলান ফোলা ফলে পশুটি শুতে পারে না এবং খুড়িয়ে হাটে।
  • এক পর্যায়ে পশুর ওলান শক্ত হতে থাকে। 
  • পরবর্তীতে ওলানের যে বাট আক্রান্ত সেই কোয়ার্টারে ফোড়া পরিলক্ষিত হয় এবং ফোরাম ফেটে যাওয়া স্থান দিয়ে মামারি টিস্যু পচে বের হয়ে আসতে দেখা যায়। 
  • আক্রান্ত কুরআনে ফোড়া ফেটে বের হয়ে আসার পর ওলান ছোট হয়ে যায়। 
  • আক্রান্ত পাট পরবর্তীতে অন্য ভাটের তুলনায় কিছুটা ছোট হয়ে আসে। 
  • কিভাবে ওলান প্রদাহ রোগ হয় 
  • কতিপায় জীবাণু ওলানে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে। ওলানে আঘাত জনিত কারণ বাছুরে দাঁতের মাধ্যমে দুটি পণ্য দহন ইত্যাদি ক্ষত সৃষ্টি হলে ওলানে জীবাণুর বংশবিস্তার ঘটে। 
  • ওলানের বাট সরাসরি নোংরা থেকে দুধ দহনকারী হাত হতে রোগ হতে পারে। 
  • ওলানের ছিদ্র দিয়ে জীবাণু প্রবেশ করতে পারে এবং দুধ দহন হতে বিরত থাকলে। 
  • পথিক দুধে চাপের কারণে দুধ জমাট বেঁধে এ রোগ সৃষ্টি হয়।
  • ওলানে আঘাত জনিত কারণ যেমন বাহ্যিক বস্তুর আঘাত বাছুরের দাঁতের আঘাত কারণে হতে পারে। 
  • ওলানের বাটে বিশেষ করে বাটের মুখে ক্ষত থাকলে 
  • অধিক দুধ উৎপাদন সিল গাভী 
  • বাচ্চা প্রসবের প্রথম দুই মাস 
  • গোয়াল ঘরের মেঝে সঠিকভাবে প্রতিদিন পরিষ্কার না করলে 
  • চতুর্থ বিয়ানের পর 
  • গাভীর দোয়ানোর পর দুই ঘণ্টার মধ্যে শুয়ে গেলে 
  • স্বাভাবিক প্রস্রাব না হলে 
  • গাভীরপুর পূর্বে একবার ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকলে। 
  • দীর্ঘদিন গাভীকে ঘাস খেতে না দিলে 

গাভীর ওলান ফোলা রোগের চিকিৎসা  

ওলান ফোলা রোগের চিকিৎসা সফলতা নির্ভর করে রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুর পত্রিকার ভেদ আক্রান্ত তীব্রতা ও উপযুক্ত ওষুধ নির্বাচন এবং প্রয়োগের উপর। এ রোগের চিকিৎসা যত দ্রুত হবে ততটা চিকিৎসা সফল হবে। দেরিতে চিকিৎসা শুরু করলে কুরআনের মারাত্মক ক্ষতিসহ চিরদিনের জন্য দুধ কমে যায়।


 তাই রোগের লক্ষণ দেখার সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়াই ভালো। নিম্নের পদ্ধতিতে চিকিৎসা করলে তীব্র তীব্র নাতি তীব্র ও সুপ্ত বা সাপ ক্লিনিক্যাল ওলান ফোলা রোগ থেকে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে এবং দুধ কমার কোন সম্ভাবনা থাকবে না।

আরো পড়ুন: দেশীয় নিম পাতা ব্যবহার করে ২২টি রোগ নিরাময় করার সহজ উপায়

খুব দ্রুত রোগ শনাক্ত করে চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। এতে জেন্টামাইসিন ও কিটোটিফেন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। এতে অনেক ভালো ফল পাওয়া যায়। ১২ ঘণ্টার মধ্যে চিকিৎসা করতে হবে। এর বেশি দেরি হলে রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে। 

গাভির ওলান ফোলা রোগের প্রতিকার ও প্রতিরোধ 

ওলান ফোলা রোগ অত্যন্ত ব্যয়বহুল ও ক্ষতিকর বিধায় রোগের সাথে না হয় সেজন্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। যেহেতু ওলান ফোলা রোগ পায়ে ১৫০ টির বেশি জীবাণু দ্বারা সংক্রমিত হয় এর রোগ কার্যকরী কোন ভ্যাকসিন বাজারে পাওয়া যায় না

 বিধায় নিম্নের পায় ১৯ টি প্রতিরোধ এবং প্রতিকার মূলক বিষয় খামারি যদি মেনে চলে তবে পোলান ফোলার রোগ অনেকখানি হ্রাস করতে পারবে। যেমন

আরো পড়ুন: মাক্সি পক্সে আক্রান্ত হলে কি করনীয় লক্ষণ দেখে বোঝার উপায়

ওলান ফোলা পোলার রোগ বিভিন্ন রকম জীবাণু দ্বারা হয়ে থাকে তাই জীবাণুর উৎস ও বিস্তার রোধ করতে হবে। 

  • দুদ্ধ খামারের মেঝে যে সবসময় পরিষ্কার ও শুকনো রাখতে হবে। গোয়াল ঘরে আলোর বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরের মেঝে কমপক্ষে দুইবার পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক আসুক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। যেমন স্যাভলন, ডেটল, পভিসেভ, সারাকিল ইত্যাদির যেকোনো একটি ব্যবহার করতে হবে।
  • খামারের মেঝে ইট ও সিমেন্টের তৈরি হওয়া বাঞ্ছনীয় কেননা মাটির মাঝি হলে ওলান ফোলা রোগ হওয়া সম্ভব  ছয় গুন বেড়ে যায়। 
  • দুগ্ধবতি গাভীর ওলান যাতে আঘাত আঘাত প্রাপ্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • খামার তৈরি করার সময় যথাযথভাবে নিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • দুগ্ধ বতী গাভীকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন ও শুকনোস্থানে রাখতে হবে।
  • প্রত্যেক গাভীর দুধ দোহনের পূর্বে গোয়ালার হাত ভালো করে পরিষ্কার করে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। একই গোয়ালা বিভিন্ন খামারের দুধ বহন করলে পোল্যান্ড খোলা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা আট গুণ বেড়ে যায়। 
  • দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর ওলানো ও পানি দিয়ে পরিষ্কার করে ও জীবন মুক্ত কাপড় দিয়ে মুছে দুধ দহন করতে হবে। 
  • দুধ দোহনের পর গা থেকে খামার দিতে হবে যাতে করে গাভী শুয়ে না পড়ে। কেননা দুধ দোহনের পর হতে দু ঘন্টা পর্যন্ত মাঠের মুখ খোলা থাকে বিদায় এর সমা অতি সহজে জীবানু বাটের মুখে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়। 
  • কোন গাভী ওরান খোলা রোগে আক্রান্ত হলে অন্য গাভীর থেকে আলাদা করে দ্রুত চিকিৎসা দিতে হবে। 
  • দাখিল সুষম খাবা সংগ্রহ করতে হবে কাভি অলানের জীবাণু প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য গাভীকে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থ যেমন ভিটামিন এ, সেলিনিয়াম জিংক ইত্যাদি সরবরাহ করতে হবে।
  • অধিক উৎপাদনশীল কাকে বলে দিনে তিন থেকে চার বার দহন করতে হবে। 
  • ওলানে অতিরিক্ত দুধ যাতে না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। 
  • প্রতিনিয়ত খামারের সকল দুগ্ধ ভর্তি কাফের দুধে কমপক্ষে একবার সোমাটিক সেল গণনা করতে হবে এবং সুপ্ত ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত গাভী শনাক্ত করে চিকিৎসা দিতে হবে।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url